স্বাগতম,পাশে থকুন

youtube twitter facebook instagram

Proper Solutions

সর্বশেষ
বাংলাদেশ বিশ্ব খেলা বিনোদন প্রযুক্তি শিক্ষা চাকরি জীবনযাপন

১ জুন বিশ্ব পিতামাতার দিবস পালন করা হবে ।

১ জুন বিশ্ব পিতামাতার দিবস। জাতিসংঘের স্বীকৃত এই দিনে জানুন ইতিহাস, তাৎপর্য, তাদের প্রতি দায়িত্ব ও শ্রদ্ধা জানানোর ১০টি উপায়।

ভিউ: ৮৫

বিশ্ব পিতামাতার দিবস ১ জুন - ভালোবাসা ও দায়িত্বের বার্তা

পোস্ট আপডেট ২৯ মে ২০২৫   ১ সপ্তাহ আগে

বিশ্ব পিতামাতার দিবস – ইতিহাস, তাৎপর্য ও ভালোবাসার বার্তা

পৃথিবীতে সবচেয়ে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হল পিতামাতার ভালোবাসা। জন্ম থেকে শুরু করে জীবনব্যাপী ছায়ার মতো পাশে থাকা মানুষগুলো হচ্ছেন আমাদের বাবা ও মা। তাদের অবদান অগণিত, অথচ আমরা তা সবসময় উপলব্ধি করতে পারি না। এই অবদানের স্বীকৃতি দিতেই প্রতিবছর ১ জুন পালিত হয় 'বিশ্ব পিতামাতার দিবস'। এটি শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক দিবস নয়, এটি আমাদের জীবনের প্রতি দায়িত্বশীলতা এবং পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব তুলে ধরে।

ইতিহাস ও সূচনা

২০১২ সালে জাতিসংঘ এই দিবসটি প্রতিষ্ঠা করে। ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তারিখে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে A/RES/66/292 রেজুলেশন পাসের মাধ্যমে ১ জুনকে "বিশ্ব পিতামাতা দিবস" হিসেবে ঘোষণা করা হয়।জাতিসংঘ ২০১২ সালে এই দিবসটি ঘোষণা করে এবং ২০১৩ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালন শুরু হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একমত হয়েছিল যে, বাবা-মায়ের ভূমিকা শুধু পরিবারেই নয়, সমাজ গঠনে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের সম্মানে একটি আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করা হয়। বিশ্ব পিতামাতার দিবস প্রথম চালু হয় জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে গৃহীত একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে। এটি একটি মহৎ পদক্ষেপ, যা বিশ্বের মানুষকে বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করে।সামাজিক মাধ্যমে #বিশ্বপিতামাতাদিবস বা #GlobalDayOfParents ট্যাগ ব্যবহার করে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

 

বিশ্ব পিতামাতা দিবস (Global Day of Parents) একটি আন্তর্জাতিক দিবস যা প্রতি বছর ১ জুন পালন করা হয়। এই দিনটি পিতামাতার প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য উৎসর্গীকৃত।বিশ্বজুড়ে এই দিনটি ভিন্ন ভিন্নভাবে পালন করা হয়। কিছু দেশে সরকারিভাবে স্কুল-কলেজে আয়োজন করা হয় কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি। আবার অনেক পরিবার নিজেদের মতো করে উদযাপন করে – একসাথে সময় কাটানো, উপহার দেওয়া, বা একটি সাধারণ ধন্যবাদ জ্ঞাপন। প্রযুক্তি যুগে সোশ্যাল মিডিয়াও এই দিবস উদযাপনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বাবা-মায়ের সাথে ছবি শেয়ার করে ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব

এই দিবসটি উপলক্ষ করে আমাদের নিজেদের ভূমিকা ও দায়িত্বগুলো নতুন করে ভাবতে শেখায়। বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের কর্তব্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সহায়তা নয়, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো, শ্রদ্ধা প্রদর্শন, মানসিকভাবে পাশে থাকা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া – এগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বড় হয়ে সন্তানদের চাকরি বা ব্যস্ততার অজুহাতে তাদের ভুলে গেলে চলবে না। তাদের মুখের হাসি, প্রশান্ত চোখের চাহনি আমাদের জীবনের বড় সাফল্য।

"যে ভালোবাসা বিনিময় চায় না, সে ভালোবাসার নাম মা-বাবা।"

বিশ্ব সাহিত্যেও পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গান ও উপন্যাস লেখা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে কাজী নজরুল ইসলাম – অনেক কবিই বাবা-মায়ের মহত্ব নিয়ে কথা বলেছেন।

"পিতামাতার ভালোবাসাই হলো পৃথিবীর একমাত্র ঋণ, যা শোধ করা অসম্ভব।" 

ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মে পিতামাতার স্থান

ইসলামে পিতামাতার মর্যাদা অত্যন্ত উচ্চে স্থান পেয়েছে। কুরআন শরীফে বহু আয়াতে আল্লাহ তাআলা পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও শ্রদ্ধার নির্দেশ দিয়েছেন।

 সূরা লুকমানে বলা হয়েছে 

আর আমরা মানুষকে তাঁর পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে। কাজেই আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।(১) ফিরে আসা তো আমারই কাছে।” (লুকমান: ১৪)।

 হাদীসেও রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জান্নাত মা'র পায়ের নিচে।” অর্থাৎ মা-বাবার খেদমত ও সন্তুষ্টির মাধ্যমে জান্নাত লাভ সম্ভব। অন্যদিকে, পিতামাতার অবাধ্যতা ইসলামে অন্যতম বড় গুনাহর অন্তর্ভুক্ত।

হিন্দুধর্মেও পিতামাতার স্থান ঈশ্বরতুল্য। “মাতৃদেবো ভব, পিতৃদেবো ভব” – এই বাণী বোঝায়, মা-বাবা হলেন দেবতুল্য। সন্তানের কর্তব্য হল তাদের সেবা, আদেশ পালন এবং কখনোই অসম্মান না করা।

খ্রিস্টধর্মে বাইবেলে বলা হয়েছে, “তোমার পিতা ও মাতাকে সম্মান করো, যেন তোমার আয়ু দীর্ঘ হয়।” (যাত্রাপুস্তক ২০:১২)। এই আদেশ দশটি প্রধান আদেশের একটি, যা পিতামাতার প্রতি দায়িত্বকে পবিত্র ধর্মীয় কর্তব্যে পরিণত করেছে।

বৌদ্ধধর্মে করুণার নীতি অনুযায়ী পিতামাতার প্রতি সহানুভূতি, স্নেহ ও দায়িত্ববোধ একটি বড় ধর্মীয় দায়িত্ব। পিতামাতা হলেন জীবনের প্রথম শিক্ষাগুরু, তাই তাদের সম্মান ও যত্ন নেওয়া আত্মিক উন্নতির একটি ধাপ।

এইভাবে, পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মেই পিতামাতাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের শেখায়, শুধুমাত্র সামাজিক বা পারিবারিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথেও পিতামাতার সন্তুষ্টি অপরিহার্য।

বাবা-মাকে খুশি করার জন্য

বিশ্ব পিতামাতার দিবসে বাবা-মাকে খুশি করার জন্য কিছু ছোট ছোট উপহার বা উদ্যোগ নিতে পারি। যেমনঃ একটি চিঠি লেখা, পারিবারিক ছবি দিয়ে তৈরি অ্যালবাম উপহার দেওয়া, বাড়িতে পছন্দের রান্না করা, তাদের নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রয়োজনীয় যন্ত্র (যেমন প্রেসার মেশিন) উপহার দেওয়া ইত্যাদি। ভালোবাসা প্রকাশের জন্য দামি কিছু প্রয়োজন নেই, আন্তরিকতাই যথেষ্ট।

১) প্রতিদিন সময় বের করে কথা বলা

২) একসাথে খাবার খাওয়া

৩) ছুটি নিয়ে পিতামাতার সাথে সময় কাটানো

৪) তাদের প্রিয় কাজগুলোতে অংশ নেওয়া

৫) চেক-আপ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সাহায্য করা

৬) তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া

৭) পুরনো স্মৃতি নিয়ে গল্প করা

৮) উপহার দেওয়া – তা হোক একটি চিঠি কিংবা ফুল

৯) পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া

১০) তাদের সম্মানে সামাজিক পোস্ট দেওয়া

আন্তর্জাতিক উদাহরণ

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পিতামাতার জন্য আলাদা করে উৎসব আয়োজন করা হয়। কিছু দেশে এটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে বিবেচিত হয়, আবার কিছু দেশে এটি শুধুমাত্র সামাজিকভাবে পালন হয়। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি পারিবারিক বন্ধন জোরদার করার একটি সেতুবন্ধন হয়ে উঠেছে।

শিশুর মানসিক বিকাশে পিতামাতার ভূমিকা

শিশুর প্রাথমিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। একটি শিশুর সামাজিক আচরণ, আত্মবিশ্বাস, ভাষাগত দক্ষতা, নৈতিকতা – সবকিছু গড়ে ওঠে পরিবারের মাধ্যমে। বাবা-মায়ের আচরণ, কথাবার্তা, সময় দেওয়া ইত্যাদি একটি শিশুর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। বাবা-মা যদি সন্তানের পাশে থেকে গঠনমূলকভাবে এগিয়ে আসেন, তাহলে সন্তান মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান এবং দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠে।

স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধ বয়সে যত্ন

বাবা-মা যখন বার্ধক্যে পৌঁছান, তখন তাদের প্রয়োজন হয় শারীরিক যত্নের পাশাপাশি মানসিক সমর্থনেরও। অনেক সময় সন্তানরা ব্যস্ত জীবনে তাদের একাকী ফেলে রাখে। অথচ এই বয়সে সবচেয়ে বেশি দরকার পারিবারিক ভালোবাসা, যত্ন, এবং সম্মান। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সময়মতো ওষুধ দেওয়া, কথা বলা, পছন্দের খাবার দেওয়া – এসব ছোট উদ্যোগ তাদের জীবনে বড় আনন্দ বয়ে আনে।

সামাজিক মাধ্যমে উদযাপন

আজকের যুগে সোশ্যাল মিডিয়া বড় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে এই দিবস উদযাপনের জন্য। অনেকেই বাবাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেন, মাকে নিয়ে কবিতা বা ভিডিও শেয়ার করেন। এমনকি কেউ কেউ ছোট ছোট ভ্লগ বানিয়ে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেন পিতামাতার জীবনের গল্প। এগুলো আমাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায় এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করে।

প্রেরণাদায়ক বাস্তব গল্প

বাংলাদেশেই অনেক সন্তান রয়েছেন যারা নিজের জীবনের সবকিছু উৎসর্গ করেছেন পিতামাতার জন্য। কেউ চাকরি ছেড়ে অসুস্থ বাবার পাশে থেকেছেন, কেউ মা-বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণে লড়েছেন শত প্রতিকূলতার মধ্যেও। এমন অনেক গল্প আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং মনে করিয়ে দেয়, আমরা যদি চাই, তবে আমাদের বাবা-মায়ের জন্য অনেক কিছুই করতে পারি।


পৃথিবীর সকল বাবা-মায়ের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলি – আপনারা না থাকলে আমরা কিছুই হতাম না। পিতামাতার আশীর্বাদই জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। আসুন, শুধু ১ জুন নয়, প্রতিটি দিন তাদের ভালোবাসায় পূর্ণ করে তুলি।

পিতামাতার দিবস শুধুমাত্র উদযাপনের দিন নয়, এটি দায়িত্ববোধের স্মারক। প্রতিটি সন্তান যেন এই দিনটিকে উপলক্ষ করে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।




কমেন্ট