২০২৫ সালের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস: তামাকজনিত ক্ষতির বিরুদ্ধে সচেতনতা ও স্বাস্থ্য রক্ষায় জাতিসংঘের বৈশ্বিক উদ্যোগের বিশ্লেষণ
ভিউ: ১৫
পোস্ট আপডেট ২৩ মে ২০২৫ ৯ ঘন্টা আগে
প্রতি বছর ৩১ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ঘোষণা করে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয়। ১৯৮৭ সালে প্রথম এই দিবসটি পালিত হলেও, ১৯৮৮ সাল থেকে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত এবং নিয়মিত পালন শুরু হয়। দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী তামাক সেবনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং তামাকবিরোধী নীতি ও কর্মসূচি উৎসাহিত করা। তামাক সেবনের কারণে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে; বিশেষ করে ফুসফুস ও হৃদরোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারসহ নানাবিধ শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের তাৎপর্য হলো, এটি বিশ্বজুড়ে তামাকমুক্ত একটি পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দিনে সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষার্থী, ও সামাজিক সংগঠনগুলো মিলে জনসাধারণের মধ্যে তামাক সেবনের ক্ষতি নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং তামাকবিরোধী আন্দোলনকে জোরদার করে।
তামাক কী?
তামাক (Tobacco) একটি গাছের পাতা, যা শুকিয়ে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়—বিশেষ করে ধূমপান, চিবানো এবং সেবনের জন্য। তামাকে থাকে নিকোটিন নামক একটি রাসায়নিক উপাদান, যা অত্যন্ত আসক্তিকর।
তামাকের ইতিহাস সংক্ষেপে:
খ্রিস্টপূর্ব ৫০০০ বছর পূর্ব থেকেই আমেরিকার আদিবাসীরা তামাক চাষ করত।
১৫ শতকে ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকায় আবিষ্কারের পর তামাক ইউরোপে যায়।
এরপর দ্রুত বিশ্বব্যাপী তামাক সেবনের প্রসার ঘটে।
বিংশ শতাব্দীতে এসে গবেষণা প্রমাণ করে যে তামাক মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম: Nicotiana tabacum
মূল উৎপত্তি: দক্ষিণ আমেরিকা
ব্যবহারের ধরণ:
ধূমপান (সিগারেট, বিড়ি, সিগার)
চিবানো তামাক (জর্দা, গুল, খৈনি)
নস্যি (নাকে দেওয়া যায় এমন শুকনো তামাক গুঁড়ো)
আসক্তি তৈরি হয় কেন?
তামাকে থাকা নিকোটিন রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে পৌঁছে ডোপামিন নামক রাসায়নিক নিঃসরণ ঘটায়, যা সাময়িক আনন্দের অনুভূতি দেয়। এ কারণে মানুষ এতে আসক্ত হয়ে পড়ে।
তামাকজাত দ্রব্যের প্রধান ধরণগুলো:
তামাক শুধু সিগারেট বা বিড়িতেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বজুড়ে এটি বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়। নিচে তামাকজাত দ্রব্যগুলোর ধরণ এবং এগুলোর ব্যবহারে ঝুঁকির তালিকা দেওয়া হলো:
এই ধরনের তামাক আগুনে জ্বালিয়ে ধোঁয়ার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়।
উদাহরণ:
সিগারেট
বিড়ি
সিগার
পাইপ
স্বাস্থ্যঝুঁকি:
ফুসফুস ক্যানসার
হৃদরোগ
স্ট্রোক
শ্বাসকষ্ট (COPD, এমফাইসেমা)
গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে শিশুতে জন্মগত সমস্যা
২. চিবানো তামাক
এটি মুখে রেখে চিবানো হয় এবং এর রস গিলে ফেলা হয় বা ফেলা হয়।
উদাহরণ:
জর্দা
খৈনি
গুল
পান-তামাক
স্বাস্থ্যঝুঁকি:
মুখগহ্বরের ক্যানসার
দাঁতের ক্ষয়
গলা ও জিহ্বার ক্ষত
হজম সমস্যা
চামড়ার রঙ পরিবর্তন
৩. নস্যি (Snuff)
নাক দিয়ে গ্রহণ করা হয় এমন শুকনো বা আর্দ্র তামাক গুঁড়ো।
স্বাস্থ্যঝুঁকি:
নাকের ক্যানসার
ফুসফুসের প্রদাহ
মাথা ঘোরা ও বমি
উচ্চ রক্তচাপ
৪. ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং
এটি আধুনিক তামাকজাত প্রযুক্তি, যেখানে নিকোটিনযুক্ত তরল উত্তপ্ত করে ধোঁয়া তৈরি করে গ্রহণ করা হয়।
উদাহরণ:
E-cigarette
Vape pen
JUUL
স্বাস্থ্যঝুঁকি:
তরুণদের নিকোটিন আসক্তি
ফুসফুসে ক্ষতি
হার্টরেট বৃদ্ধি
নিউরোলজিকাল বিকাশে সমস্যা
৫. হিট-নট-বার্ন (HNB) পণ্য
এই ধরনের পণ্য তামাককে সরাসরি না জ্বালিয়ে উত্তপ্ত করে ধোঁয়া তৈরি করে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি:
এই ধরনের পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এখনো পুরোপুরি গবেষিত নয়। তবে তাতে থাকা রাসায়নিক উপাদান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।
তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি
ক্ষতির ধরণ | বিবরণ |
শারীরিক | ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাঁপানি |
মানসিক | আসক্তি, উদ্বেগ, হতাশা |
সামাজিক | পারিবারিক বিচ্ছেদ, শিশুদের প্রতি খারাপ প্রভাব |
অর্থনৈতিক | চিকিৎসা ব্যয়, কর্মক্ষমতা হ্রাস |
পরিবেশগত | ধোঁয়ার দূষণ, সিগারেটের ফিল্টার দ্বারা প্লাস্টিক দূষণ |
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস (World No Tobacco Day) প্রতি বছর ৩১ মে তারিখে পালিত হয়। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) কর্তৃক ঘোষিত একটি আন্তর্জাতিক সচেতনতা দিবস, যার উদ্দেশ্য হলো তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করা এবং তামাকমুক্ত সমাজ গঠনের আহ্বান জানানো।
ইতিহাস: কবে থেকে শুরু হয়?
১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো WHO এই দিবসটি পালনের ঘোষণা দেয়।
প্রথম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালিত হয় ৭ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে।
১৯৮৯ সাল থেকে প্রতিবছর ৩১ মে দিনটিকে নির্ধারিত করা হয় “World No Tobacco Day” হিসেবে।
মূল লক্ষ্য
তামাকের কারণে হওয়া স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
সরকার, এনজিও, এবং ব্যক্তি পর্যায়ে তামাক নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহ দেওয়া।
তামাক কোম্পানিগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রভাব বিস্তার রোধে পদক্ষেপ নেওয়া।
যুব সমাজকে তামাক থেকে দূরে রাখা।
প্রতিবছরের প্রতিপাদ্য (Theme)
WHO প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে, যা অনুযায়ী প্রচারাভিযান পরিচালিত হয়।
সাল | প্রতিপাদ্য (Theme) |
২০১৯ | Tobacco and lung health |
২০২০ | Protecting youth from industry manipulation |
২০২১ | Commit to quit |
২০২২ | Tobacco: Threat to our environment |
২০২৩ | Grow food, not tobacco |
২০২৪ | Protect children from tobacco industry interference |
২০২৫ | (প্রত্যাশিত) “End Tobacco for a Healthier Future” (সম্ভাব্য) |
দয়া করে মনে রাখবেন, ২০২৫ সালের অফিসিয়াল প্রতিপাদ্য WHO ঘোষণা করলে তা নিশ্চিত করা হবে।
বিশ্বব্যাপী তামাক পরিস্থিতি (WHO ডেটা অনুযায়ী)
প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ তামাকজনিত কারণে মারা যায়।
যার মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষ পরোক্ষ ধূমপান (Passive Smoking)-এর কারণে প্রাণ হারায়।
বিশ্বের প্রায় ১.৩ বিলিয়ন তামাক ব্যবহারকারী রয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে।
বাংলাদেশে এর তাৎপর্য
বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা।
বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস এখানে বড় আকারে পালিত হয়—
সরকারি/বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে।
স্কুল-কলেজে আয়োজন করা হয় র্যালি, পোস্টার প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা।
তামাকের বিরুদ্ধে টেলিভিশন, অনলাইন এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার চালানো হয়।
বাংলাদেশ সরকার 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০' লক্ষ্যে কাজ করছে।
এই দিবসের গুরুত্ব
এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক দিবস নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক আহ্বান—
“জীবন বাঁচান, তামাক ছাড়ুন।”
যুবসমাজকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সরকারের নীতিনির্ধারণ এবং আইন প্রণয়নের একটি চাপ সৃষ্টিকারী হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করে।
বিশ্বব্যাপী তামাকজনিত মৃত্যু ও রোগবালাই কমাতে শুধু একদিনের সচেতনতাই যথেষ্ট নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), জাতিসংঘ, বিভিন্ন সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ লক্ষ্যে বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৭০-এর দশক থেকে তামাকবিরোধী কার্যক্রম শুরু করে। ২০০৩ সালে এটি সবচেয়ে বড় এক সাফল্য অর্জন করে—Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) চুক্তি প্রণয়ন করে।
পূর্ণরূপ: WHO Framework Convention on Tobacco Control
গৃহীত হয়: ২০০৩ সালে
কার্যকর হয়: ২০০৫ সাল থেকে
চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ: ১৮০+ এর বেশি দেশ
বাংলাদেশ: ২০০৪ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুমোদন করে
প্রধান লক্ষ্যসমূহ:
তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও স্পনসরশিপ নিষিদ্ধ করা
স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ লেবেল বাধ্যতামূলক করা
তামাকপণ্যের দাম ও কর বাড়ানো
পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ
শিশু-কিশোরদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি
জাতিসংঘের (UN) সমর্থন
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)-এর একটি বড় অংশ হলো “সকল বয়সী মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা”।
SDG Goal 3: Good Health and Well-being
উল্লেখ্য, তামাক ব্যবহারের ফলে বিশ্বে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত খরচ হয় বছরে প্রায় ১.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
শিশু ও কিশোরদের তামাক থেকে দূরে রাখতে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে।
ফুসফুসের রোগ, যক্ষ্মা এবং তামাকবিরোধী সচেতনতায় কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
উন্নয়নশীল দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
পৃথিবীর ৫০টির বেশি দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে অনেক অগ্রগতি হয়েছে:
জনসমক্ষে ধূমপান নিষিদ্ধ
বিজ্ঞাপন ও প্রোমোশন নিষিদ্ধ
স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাধ্যতামূলক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে বিক্রি নিষিদ্ধ
‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ২০৪০’ ঘোষণা
স্কুলে তামাক বিরোধী শিক্ষা অন্তর্ভুক্তি
মোবাইল ফোনে তামাকবিরোধী বার্তা প্রচার
চিত্রায়িত স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ লেবেল বাধ্যতামূলক করা
তামাক বিরোধী রোডশো, সেমিনার, কুইজ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করে।
গবেষণা ও তথ্য প্রচার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে।
যুবসমাজকে তামাক বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করার কাজ করে।
বাস্তব সাফল্য
গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ধূমপানের হার ৩৫% থেকে কমে ২৮% হয়েছে।
স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে।
বিড়ি-সিগারেটের কর বৃদ্ধি হয়েছে।
তামাকের প্রতি আসক্তি একধরনের শারীরিক এবং মানসিক নির্ভরতা। একজন মানুষ যখন দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান বা তামাক সেবন করে, তখন শরীরে নিকোটিন নামক রাসায়নিক পদার্থের উপর নির্ভরতা তৈরি হয়। এই নির্ভরতা কাটানো সহজ নয়, তবে সঠিক উপায়ে, ধৈর্য ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি সম্ভব।
নিকোটিন আসক্তি কী?
নিকোটিন হলো তামাক গাছের পাতায় থাকা একটি উত্তেজক রাসায়নিক পদার্থ। এটি মস্তিষ্কে ডোপামিন নামক রাসায়নিক নিঃসরণ বাড়ায়, ফলে অল্প সময়ের জন্য আনন্দ বা প্রশান্তি অনুভব হয়। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার করলে শরীর তা ছাড়া থাকতে পারে না।
মাথাব্যথা
বিরক্তি বা রাগ
মনোযোগের ঘাটতি
ঘুমের সমস্যা
খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
তামাক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিজে থেকেই নিতে হবে। পরিবার বা সমাজের চাপ যতই থাকুক, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে নিজের মন থেকে।
প্রস্তুতির ধাপ:
ছাড়ার তারিখ ঠিক করুন (Quit Day)
কারণ লিখে রাখুন — “আমি কেন ছাড়তে চাই?”
তামাক ব্যবহার সংক্রান্ত অভ্যাসগুলো চিহ্নিত করুন (যেমন: চা খাওয়ার সময়, চাপের সময় ইত্যাদি)
২. বিকল্প আচরণ (Behavioral Therapy)
মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে এবং তামাক ছাড়ার সময় নতুন অভ্যাস তৈরি করতে হবে:
পুরোনো অভ্যাস | বিকল্প অভ্যাস |
সিগারেট ধরানো | পানি পান করা, ফল খাওয়া |
চাপের সময় ধূমপান | হাঁটাহাঁটি, শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম |
চা/কফির সঙ্গে তামাক | লেবুর পানি, হারবাল চা |
যারা তামাক একবারে ছাড়তে পারছেন না, তাদের জন্য নিকোটিন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (NRT) ব্যবহার কার্যকর হতে পারে। এতে শরীরে সামান্য পরিমাণ নিকোটিন প্রবেশ করানো হয় — কিন্তু সিগারেটের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক ছাড়াই।
প্রসিদ্ধ NRT পদ্ধতি:
নিকোটিন গাম (Nicotine Gum)
নিকোটিন প্যাচ (Nicotine Patch)
ইনহেলার
লোজেনজ
নেসাল স্প্রে
➡ বাংলাদেশে কিছু সরকারি হাসপাতাল ও NGO এই থেরাপি বিনামূল্যে দেয়।
৪. ওষুধের সাহায্য
কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিচের ওষুধগুলো গ্রহণ করা যায়:
ওষুধের নাম | কার্যকারিতা |
Bupropion (Zyban) | তামাকের ইচ্ছা কমায় |
Varenicline (Champix) | মস্তিষ্কে নিকোটিনের প্রভাব কমিয়ে দেয় |
Nortriptyline | মনোভাব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে |
সব ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা যাবে না।
৫. সহায়তা ও কাউন্সেলিং
পরিবারের সহায়তা, বন্ধুবান্ধবের অনুপ্রেরণা এবং পেশাদার কাউন্সেলরের পরামর্শ তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে কোথায় সহায়তা পাওয়া যায়:
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের তামাক ছাড়ার ক্লিনিক
জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, মহাখালী
YPSA ও প্রজ্ঞার সহযোগিতায় তামাক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসমূহ
মোবাইল সাপোর্ট হেল্পলাইন (যেমন: ১৬২৬৩ স্বাস্থ্য বাতায়ন)
ধ্যান ও মেডিটেশন: মানসিক শক্তি বাড়াতে সহায়তা
মেডিটেশন, প্রানায়াম ও নিয়মিত যোগ ব্যায়াম মানসিক চাপ কমিয়ে তামাক ছাড়তে সাহায্য করে।
প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন
“দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়ুন” – এই ব্যায়াম দারুণ কার্যকর
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন অভ্যাস তৈরি করতে ২১ দিন দরকার।
দিন | লক্ষ্য |
১-৭ দিন | তীব্র ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণ |
৮-১৪ দিন | ধূমপান ছাড়া সামাজিকতা |
১৫-২১ দিন | আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যউন্নতি |
একটি "তামাক ছাড়ার ডায়েরি" রাখতে পারেন, যেখানে আপনি প্রতিদিনের অগ্রগতি লিখে রাখবেন।
সফল ব্যক্তিদের গল্প
বিশ্বজুড়ে এবং বাংলাদেশেও এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দীর্ঘদিন তামাক সেবনের পর তা ছেড়ে দিয়েছেন এবং আজ তারা সুস্থ, কর্মক্ষম ও অনুপ্রেরণাদায়ী।
একজন প্রাক্তন সিগারেট সেবীর অভিজ্ঞতা:
“আমি ১২ বছর সিগারেট খেয়েছি। যখন আমার ছোট ছেলে বললো – বাবা, তুমি তামাক খাও কেন? তখন আমার বিবেক জেগে উঠেছিল। আমি সিদ্ধান্ত নিই — এবার থামতেই হবে। প্রথম কিছুদিন কষ্ট হলেও এখন আমি ৩ বছর ধরে তামাকমুক্ত।”
তরুণ সমাজ কোনো দেশের ভবিষ্যৎ। তাই তরুণদের মধ্যে তামাক বিরোধী সচেতনতা গড়ে তোলা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বিশ্বে ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ৯ কোটি তরুণ ধূমপায়ী। বাংলাদেশেও কিশোর-কিশোরীরা তামাকের আসক্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।
তরুণদের তামাক সেবনের ভয়াবহ প্রভাব
তামাকের কারণে তরুণদের ফুসফুস বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্ট হয়। হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ নানা গুরুতর রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
নিকোটিন আসক্তি মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এবং মনোযোগের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে।
ধূমপানের কারণে তরুণদের অর্থ খরচ বৃদ্ধি পায়, যা পড়াশোনা ও ব্যক্তিগত উন্নয়নে ব্যয় হওয়া উচিত।
তামাক সেবন সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে এবং তরুণদের অবাঞ্ছিত পরিচয়ে ফেলতে পারে।
তরুণদের জন্য সচেতনতামূলক পদক্ষেপ
সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত তামাক বিরোধী সচেতনতামূলক ক্লাস ও ওয়ার্কশপ করা।
ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে যুবসমাজকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন ও ভিডিও তৈরি করা।
যুবসমাজের মধ্যে যারা তামাক মুক্ত, তাদের পজিটিভ উদাহরণ তুলে ধরা ও বন্ধুদের মধ্যে প্রভাব বৃদ্ধি।
যেখানে তরুণরা তামাকের থেকে দূরে থাকতে পারে, সেসব জায়গা তৈরি ও প্রমোট করা।
মিথ্যা বিজ্ঞাপন ও বিপজ্জনক প্রলোভন
তামাক কোম্পানিগুলো তরুণদের আকৃষ্ট করতে নানা মিথ্যা বিজ্ঞাপন ও আকর্ষণীয় প্যাকেজিং ব্যবহার করে। তরুণদের সচেতন থাকতে হবে এসবের বিরুদ্ধে।
তরুণ নেতাদের উদাহরণ
অনেক তরুণ নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামাক বিরোধী আন্দোলনে। তারা সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা ছড়াচ্ছেন, স্কুল-কলেজে ক্যাম্পেইন করছেন।
‘No Tobacco’ ক্যাম্পেইন – স্কুল-কলেজে প্রচার
Youth for Tobacco-Free Bangladesh – স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠন
Digital Awareness Campaigns – সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা বাড়ানো
Copyright © NRS IT 2025