আজ ‘আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস’ – জানুন এই দিবসের ইতিহাস, গুরুত্ব, বিশ্বব্যাপী উদযাপন পদ্ধতি এবং পরিবার গঠনের সামাজিক তাৎপর্য
ভিউ: ৫১
পোস্ট আপডেট ১৫ মে ২০২৫ ৪ দিন আগে
বিশ্বব্যাপী পরিবারকে সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। পরিবার ছাড়া সমাজের কাঠামো কল্পনা করা যায় না। পরিবারই আমাদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সংস্কৃতির প্রথম পাঠশালা। এই পরিবারের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতেই জাতিসংঘ প্রতি বছর ১৫ মে তারিখে ‘আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস’ উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের সূচনা হয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ এই দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করে এবং ১৯৯৩ সালে ১৫ মে-কে "International Day of Families" হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে প্রতি বছর এই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে।
এই দিবসটির মূল লক্ষ্য ছিল পরিবারগুলোর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, পারিবারিক বন্ধন জোরদার করা এবং পরিবার-ভিত্তিক নীতিমালাগুলোর গুরুত্ব তুলে ধরা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে পারিবারিক কাঠামো বিভিন্ন কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে, সেখানে এই দিবসটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
আন্তর্জাতিক পরিবার দিবসের তাৎপর্য
পরিবারই শিশুদের মূল্যবোধ শেখার প্রথম কেন্দ্র। মা-বাবা, ভাই-বোনের সম্পর্কই শেখায় কিভাবে ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তুলতে হয়।
পরিবার অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষুদ্র অর্থনৈতিক ইউনিট। তারা ব্যয়ের পরিকল্পনা করে, আয়-ব্যয় সামলে চলে, ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে। একটি শক্তিশালী পরিবারই একটি শক্তিশালী জাতির ভিত্তি।
পরিবারের ভালবাসা, সহানুভূতি ও সমর্থন মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় পরিবার একটি সুরক্ষিত আবরণ তৈরি করে।
জাতিসংঘ প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট থিম নির্ধারণ করে। যেমন ২০২৫ সালের থিম হতে পারে – "Families and Climate Action"। এই থিম অনুযায়ী দেশগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করে।
বিভিন্ন দেশে পরিবার কেন্দ্রিক পিকনিক, মিলনমেলা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিশুদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।
আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবার দিবসকে কেন্দ্র করে ছবি শেয়ার, স্মৃতিচারণ, ভিডিও বার্তা ও ব্লগ পোস্ট শেয়ার করা খুবই জনপ্রিয়।
বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এই দিবসটির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, মিডিয়া হাউজ ও সরকারি দপ্তর দিবসটিকে কেন্দ্র করে নানা কার্যক্রম পালন করছে।
বাংলাদেশে এখনও যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবারের দিকে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। কর্মব্যস্ততা, অর্থনৈতিক চাপ, এবং আধুনিক জীবনের চাহিদা পারিবারিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলছে।
পরিবারের সকল সদস্য একসাথে সময় কাটাতে পারেন
ছোট একটি পারিবারিক ভ্রমণ
মা-বাবা বা দাদা-দাদির সঙ্গে বসে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন
পারিবারিক গল্প/ছবি/ভিডিও একসাথে দেখা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিবারের ছবি ও স্মৃতি শেয়ার
“পরিবার হচ্ছে প্রকৃতির একটি শ্রেষ্ঠ উপহার।” — জর্জ সান্তায়ানা
“আপনার পরিবারই আপনার প্রথম ও শেষ আশ্রয়।” — ব্রুস উইলিস
“শক্তিশালী সমাজের ভিত্তি হলো একটি সুখী পরিবার।” — ডেল কার্নেগি
পরিবারের গুরুত্ব চিরন্তন। আধুনিক সমাজের ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক সময় পরিবারকে অবহেলা করি। কিন্তু আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পরিবারই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই আসুন, এই দিনটিতে আমরা আমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই এবং পারিবারিক বন্ধনকে আরো দৃঢ় করি।
Copyright © NRS IT 2025