স্বাগতম,পাশে থকুন

youtube twitter facebook instagram

Proper Solutions

সর্বশেষ
খেলা বিনোদন প্রযুক্তি শিক্ষা চাকরি জীবনযাপন

টিকটকের প্রভাব স্বামীকে ছেড়ে অন্য ছেলের সাথে পালাল স্ত্রী

টিকটক অ্যাপে আসক্তি বাড়ায়, সংসার ভাঙছে! স্বামীকে ছেড়ে টিকটক প্রেমিকের সাথে পালাল তরুণী, সমাজে উদ্বেগ বাড়ছে

ভিউ: ৪৪

টিকটকের কারণে স্বামীকে ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে স্ত্রী

পোস্ট আপডেট ১১ মে ২০২৫   ১ সপ্তাহ আগে

বর্তমান যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি মানুষের জীবনযাত্রাকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি এর নেতিবাচক দিকগুলোও সমাজে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে। এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো সোশ্যাল মিডিয়া—বিশেষ করে টিকটক (TikTok) নামক ভিডিও প্ল্যাটফর্ম। এই অ্যাপটির মাধ্যমে অনেকেই হয়ে উঠেছে তারকা, আবার অনেকেই হারিয়েছেন সম্পর্ক, পরিবার ও জীবনের স্থিতি।

আজকের আলোচনার বিষয় “টিকটক আসক্তি ও ভার্চুয়াল প্রেমের কারণে মেয়েরা স্বামীকে ছেড়ে অন্য ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যাচ্ছে”—এটি নিছক কোনো গল্প নয়, বাস্তবেই এমন ঘটনা ঘটছে এবং দিনকে দিন এই প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

ঘটনা বিশ্লেষণ: স্বামীকে ছেড়ে পালাল স্ত্রী

রাজধানীর মিরপুর এলাকার এক গৃহবধূ নাসরিন (ছদ্মনাম), যিনি টিকটকে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন, তার স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে সে টিকটকের মাধ্যমে এক যুবকের সঙ্গে যোগাযোগে আসে, যাকে সে কখনো সামনাসামনি দেখেনি, শুধু ভিডিও কমেন্ট ও মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি হয়।

এই সম্পর্ক দিনে দিনে এতটাই গভীর হয় যে, একসময় নাসরিন তার স্বামী ও সন্তানকে ফেলে সেই টিকটক প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যায়। পরে জানা যায়, সেই প্রেমিক ছিল একজন পেশাদার প্রতারক, যার টার্গেটই ছিল জনপ্রিয় টিকটকার মেয়েরা।

টিকটক কীভাবে এমন সম্পর্ক তৈরি করছে?

টিকটক একটি ভিডিও-ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ছোট ছোট ভিডিওর মাধ্যমে মানুষ নিজেদের প্রকাশ করে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা:

  • নিজেরা জনপ্রিয় হতে চায়

  • ফলোয়ার বাড়াতে চায়

  • ভিডিওতে লাইক ও কমেন্ট পেতে চায়

  • অন্যদের সাথে ভার্চুয়াল সম্পর্ক গড়ে তোলে

এই চাহিদা থেকেই শুরু হয় ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব, যা একসময় রূপ নেয় প্রেমে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই সম্পর্কগুলোর ভিত্তি নেই, বাস্তবতার ছোঁয়া নেই। শুধুমাত্র "ভিউস", "কমেন্ট", আর "ইমোজি"—এই দিয়ে যে ভালোবাসা তৈরি হয় তা ক্ষণস্থায়ী এবং বিভ্রান্তিকর।

 সংসার ভাঙার পেছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ

বেশ কিছু মনোবিজ্ঞানী বলছেন, টিকটক অ্যাপের এলগরিদম এমনভাবে ডিজাইন করা, যা ব্যবহারকারীদের স্ক্রিনে আটকে রাখে। ফলস্বরূপ, কেউ যখন প্রশংসা বা ভালোবাসা পায়, তারা একধরনের “ডোপামিন রিওয়ার্ড” অনুভব করে। এটি তাদের বারবার সেই অনুভূতি পেতে বাধ্য করে।

একটি গৃহবধূ যখন নিয়মিত টিকটকে অন্য পুরুষদের কাছ থেকে প্রশংসা পায়, তখন সেটি তার নিজের পারিবারিক জীবনের সঙ্গে তুলনা করে। যেখানে হয়তো সে যত্ন পাচ্ছে, ভালোবাসা পাচ্ছে না, সেখানে ভার্চুয়াল জগতে সে এক ধরনের কৃত্রিম ভালোবাসার আবেশে পড়ে যাচ্ছে।

 সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপট

বিচ্ছেদ, পরকীয়া ও সংসার ভাঙনের ঘটনা সমাজে আগে থেকেই ছিল, তবে এখন টিকটকের মাধ্যমে তা অনেক বেশি খোলামেলা ও দ্রুততর হচ্ছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য তথ্য:

  • ২০২৪ সালে শুধু ঢাকা মহানগরীতেই ২,৮০০+ গৃহবধূ স্বামীকে ছেড়ে পালিয়েছে, যাদের অধিকাংশই টিকটকে সক্রিয় ছিলেন।

  • পুলিশের সাইবার ইউনিট জানায়, প্রায় ৬৭% ভার্চুয়াল সম্পর্ক প্রতারণায় শেষ হয়।

  • পারিবারিক আদালতের আইনজীবীরা বলছেন, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ মামলার সংখ্যা ৩৫% বেড়েছে, যার কারণ হিসেবে টিকটককে অন্যতম বলা হয়েছে।

 সমাজবিদ ও মনোবিদদের মতামত

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. মাহবুবা ইয়াসমিন বলেন,
“ভার্চুয়াল মাধ্যমে তৈরি সম্পর্কগুলো একটি কৃত্রিম আকর্ষণ তৈরি করে। মানুষ বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে রঙিন দুনিয়ায় বিশ্বাস করতে শুরু করে। বিশেষ করে নারীরা যদি পরিবার থেকে যথেষ্ট ভালোবাসা ও সম্মান না পান, তারা বাইরের প্রশংসা খুঁজে নিতে বাধ্য হন।”

মনোবিদ রাশেদা বেগম বলেন,
“টিকটক এমন এক প্ল্যাটফর্ম যা মনস্তাত্ত্বিকভাবে ব্যবহারকারীদের আসক্ত করে তোলে। এটিকে মাদক বা জুয়া আসক্তির মতো করেই চিকিৎসা করা দরকার।”

 কীভাবে রোধ করা যায় এই প্রবণতা?

পারিবারিক সম্পর্কের উন্নয়ন:
সংসারে ভালোবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং খোলামেলা আলোচনা থাকতে হবে।

ডিজিটাল ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা:
পরিবারের সদস্যদের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মোবাইল ব্যবহার সীমিত করতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে সচেতনতা:
বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে সেমিনার হওয়া উচিত।

আইনি ব্যবস্থা:
যারা ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করে প্রতারণা করে তাদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।

ধর্মীয় দিক নির্দেশনা:
ধর্মীয় মূল্যবোধ অনুযায়ী পারিবারিক বন্ধনকে গুরুত্ব দিতে হবে।

 বাস্তব কাহিনি

আমাদের নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে পাঠকদের অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা হয় এবং সেখানে প্রায় ৫০টির বেশি এমন ঘটনা এসেছে, যেখানে পাঠকের বোন, স্ত্রী বা মেয়ে টিকটক প্রেমে জড়িয়ে পরিবার ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ফিরে এসেছেন, আবার কেউ চিরতরে হারিয়ে গেছেন।

টিকটক প্রযুক্তির একটি বড় উদাহরণ, কিন্তু তার ভুল ব্যবহার সমাজে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। ভার্চুয়াল প্রেম, সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি আর বাস্তব সম্পর্কের সংকট এখন একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের প্রয়োজন এখনই সচেতন হওয়া—পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনা।

এই সমস্যা রোধে ব্যক্তি, পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকার—সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। না হলে আগামী দিনের সমাজ হবে আরও ভঙ্গুর, বিচ্ছিন্ন ও অস্থির।

 সচেতন হোন! সমাজ বাঁচান! পরিবার রক্ষা করুন!

প্রিয় পাঠক,
এই সমাজ আপনার, আমার, আমাদের সবার। টিকটক বা অন্য যে কোনো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বিনোদনের জায়গা হতে পারে, কিন্তু যখন তা পারিবারিক সম্পর্ক, নৈতিকতা এবং সমাজ কাঠামো ধ্বংস করে দেয়, তখন তা ভয়ঙ্কর এক বিষে পরিণত হয়।

 ভার্চুয়াল ভালোবাসা সত্যিকারের ভালোবাসা নয়।
ফলোয়ার বা লাইকের পেছনে ছুটতে গিয়ে আপনার জীবনের মূল্যবান সম্পর্ক হারিয়ে ফেলবেন না।
টিকটক কোনো পারিবারিক মূল্যবোধ শেখায় না, শেখায় কৃত্রিম জনপ্রিয়তা।
  সন্তানদের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে ভাবুন—তারা কোন দিকে যাচ্ছে?

আপনি যদি বাবা, মা, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন হন—তাহলে এখনই সতর্ক হোন।

 পরিবারকে সময় দিন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সীমা নির্ধারণ করুন।
সন্তানদের বন্ধুর মতো পরামর্শ দিন।
সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস, ভালোবাসা ও সম্মান তৈরি করুন।

 সমাজকে রক্ষা করতে হলে আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার টিকটক নয়, বাস্তব জীবনের নিরাপদ আশ্রয় হওয়া উচিত।
আসুন, আমরা সবাই মিলে টিকটকসহ সকল ভার্চুয়াল আসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।


"সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, সমাজ ও পরিবারকে ভালোবাসুন।"



কমেন্ট