স্বাগতম,পাশে থকুন

youtube twitter facebook instagram

Proper Solutions

সর্বশেষ
খেলা বিনোদন প্রযুক্তি শিক্ষা চাকরি জীবনযাপন

তারাবিতে আজ কোন সুরা তিলাওয়াত করা হবে।

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ৮৮ থেকে সুরা মায়িদার ৮২ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করা হবে।

ভিউ: ১০৯

পুলিশের প্রেস ব্রিফিং ছবি

পোস্ট আপডেট ০৪ মার্চ ২০২৫   ২ মাস আগে

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ৮৮ নম্বর আয়াত থেকে সুরা মায়িদার ৮২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। এতে পঞ্চম পারার দ্বিতীয়াংশ ও সম্পূর্ণ ষষ্ঠ পারা—মোট দেড় পারা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ অংশে মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক, মানুষের নৈতিক অবনতি, সঠিক বন্ধু নির্বাচন, মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র, হত্যার বিধান, জিহাদ, ঈসা (আ.)-কে হত্যার চক্রান্ত, কুফর ও শিরক, সমাজ সংস্কার, চুরির শাস্তি, ইহুদিদের অভিশপ্ত হওয়ার কারণ, হিজরত এবং হাবিল-কাবিলের কাহিনিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

সফর অবস্থায় নামাজ আদায়ের নিয়ম

সুরা নিসার ১০১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা সফর অবস্থায় নামাজ আদায়ের বিধান নির্ধারণ করেছেন। ইসলামী বিধান অনুসারে, কেউ যদি নিজ অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল (প্রায় ৭৮ কিলোমিটার) দূরত্বে সফর করেন, তাহলে তিনি মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন।

  • গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর পর যদি ১৫ দিনের কম সময় অবস্থানের নিয়ত করেন, তবে তিনি মুসাফির থাকবেন।
  • ১৫ দিনের বেশি থাকার ইচ্ছা হলে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবেন না।

নামাজ আদায়ের নিয়ম:

  • মুসাফির অবস্থায় চার রাকাত ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে, একে শরিয়তের পরিভাষায় কসর নামাজ বলা হয়।
  • সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রে কোনো কসর নেই, অর্থাৎ সুন্নত নামাজ আগের মতোই পড়তে হয়।
ন্যায়বিচারের নির্দেশনা ও কোরআনের আয়াত

নবীজি (সা.) মদিনায় অবস্থান করছেন, কিছুদিন হলো তিনি হিজরত করেছেন। তখনকার মুসলমানরা দারিদ্র্য ও অনাহারে দিন কাটাতেন। তাদের খাদ্য ছিল মূলত যব ও গমের আটা এবং খেজুর। মদিনায় এগুলো সহজলভ্য ছিল না। সিরিয়া থেকে চালান এলে কেউ কেউ তা সংগ্রহ করতেন এবং বিশেষ প্রয়োজনে সংরক্ষণ করতেন।

একবার হজরত রেফাআহ (রা.) কিছু গমের আটা কিনে একটি বস্তায় সংরক্ষণ করেন। সেই বস্তার মধ্যে কিছু অস্ত্রশস্ত্রও ছিল। আনসার গোত্রের বনি উবাইরাকের এক ব্যক্তি, তমা ইবনে উবাইরাক, বস্তা থেকে একটি বর্ম চুরি করে। সে বর্মটি লুকিয়ে রাখতে গিয়ে এর সঙ্গে লেগে থাকা আটা ছড়াতে ছড়াতে নিজ ঘরে পৌঁছে। পরে সে বর্মটি জায়েদ ইবনে সামিন নামে এক ইহুদির কাছে রেখে আসে।

বর্ম চুরির ঘটনা জানাজানি হলে তমা ইবনে উবাইরাক বর্ম চুরির কথা অস্বীকার করে এবং আল্লাহর নামে শপথ নেয় যে, সে এটি নেয়নি। কিন্তু রেফাআহ (রা.) দাবি করেন যে, তিনি তমার ঘরে আটার চিহ্ন দেখেছেন। তবুও, শপথ করার কারণে তমাকে তখন ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে, আটার চিহ্ন ধরে অনুসরণ করা হলে বর্মটি ওই ইহুদির ঘরে পাওয়া যায়। ইহুদি তখন জানায়, তমা ইবনে উবাইরাকই এটি তার কাছে রেখে গেছে।

এ সময় বনু জুফার গোত্রের কিছু লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গিয়ে রেফাআহ ও কাতাদাহ (রা.)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এবং বলে যে, চোরাই মাল ইহুদির ঘরে পাওয়া গেছে। ফলে নবীজি (সা.) ইহুদিকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ঠিক তখনই সুরা নিসার ১০৫ নম্বর আয়াত নাজিল হয়—
‘নিশ্চয়ই আমি আপনার ওপর অবতীর্ণ করেছি সত্য কিতাব; যেন আল্লাহ আপনাকে যা হৃদয়ঙ্গম করিয়েছেন, তার মাধ্যমে মানুষের ভেতর ন্যায়বিচার করেন। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করবেন না।’

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেন যে, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে কারো বিরুদ্ধে অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলাম যে কতটা কঠোর, এই ঘটনাটি তার অন্যতম উদাহরণ।

দাম্পত্যজীবনে আপস ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তবে বাস্তব জীবনে কখনো কখনো দাম্পত্যজীবনে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা সংসার টিকিয়ে রাখা কঠিন করে তোলে।

ইসলামে দাম্পত্য জীবনে আপস ও বোঝাপড়ার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে যদি কোনোভাবেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক না থাকে, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা লোপ পায়, তাহলে তারা চাইলে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে আলাদা হতে পারে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী স্ত্রীকে যথাযথ সম্মান দেয় না, তার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে, এমনকি নির্যাতনও করে। কিন্তু তবুও স্ত্রীকে তালাক দিতে রাজি হয় না। এ অবস্থায় ইসলাম স্ত্রীকে বাধ্য করে না যে, তাকে অত্যাচার সহ্য করতেই হবে। বরং ইসলাম এমন পরিস্থিতিতে স্ত্রীকে বিচ্ছেদের অধিকার প্রদান করেছে।

কোরআনে বলা হয়েছে—
‘আর যদি কোনো নারী তার স্বামীর অবজ্ঞা বা বিমুখতা আশঙ্কা করে, তবে তাদের পরস্পরের মধ্যে আপস করলে তাদের দোষ হবে না। আপস করাই উত্তম।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১২৮)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, আপস ও সমঝোতার মাধ্যমে দাম্পত্যজীবন রক্ষা করাই উত্তম। তবে যখন সম্পর্ক একেবারেই টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয় না, তখন ইসলাম বিচ্ছেদের পথও খোলা রেখেছে, যাতে কেউ জুলুমের শিকার না হয়।

দস্তরখানের নামে সুরার নাম: সুরা মায়িদা

পবিত্র কোরআনের পঞ্চম সুরা হলো সুরা মায়িদা, যা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুরায় মোট ১২০টি আয়াত রয়েছে। "মায়িদা" শব্দের অর্থ "দস্তরখান" বা খাবারের টেবিল। এ সুরায় একটি বিশেষ ঘটনার কারণে এর নামকরণ মায়িদা করা হয়েছে।

সুরা মায়িদার বিশেষ ঘটনা

প্রত্যেক নবী-রাসুলের সঙ্গেই কিছু বিশ্বাসী অনুসারী থাকতেন, যারা তাদের শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণ করতেন।

  • হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবিদের বলা হয় সাহাবি
  • হজরত ঈসা (আ.)-এর অনুসারীদের বলা হতো হাওয়ারি

হাওয়ারিরা একবার হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে আসমান থেকে খাবারের দস্তরখান পাঠানোর আবেদন করেছিল। তখন ঈসা (আ.) আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য খাদ্যভর্তি খাঞ্চা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুরা মায়িদার ১১৫ নম্বর আয়াত নাজিল হয়।

সুরা মায়িদার গুরুত্ব

মহানবী (সা.)-এর প্রিয় স্ত্রী হজরত আয়েশা (রা.) বলেন—
‘অবতীর্ণ হওয়ার দিক থেকে সুরা মায়িদা সর্বশেষ সুরা। এতে হালাল-হারামের অনেক বিধান নাজিল হয়েছে এবং তিনটি কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫,৫৪৭)

এ সুরার ৩ নম্বর আয়াতটি বিদায় হজের সময় নাজিল হয়েছিল, যেখানে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন:
‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়িদা: ৩)

এই আয়াত ইসলামের পরিপূর্ণতা এবং চূড়ান্ত জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

যেসব খাদ্য হারাম

আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন, তা চিরকাল হারাম থাকবে। মানুষের কল্যাণের জন্য হালালের পরিমাণ বেশি রেখেছেন এবং কিছু নির্দিষ্ট খাবার হারাম করেছেন।

সুরা মায়িদার ৩ নম্বর আয়াতে হারাম খাবারের একটি তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—

  • মৃত প্রাণী (যা স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে)
  • (প্রবাহিত) রক্ত
  • শূকরের মাংস
  • আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে বলি দেওয়া পশু
  • গলা টিপে বা শ্বাসরোধে মারা প্রাণী
  • আঘাতে নিহত প্রাণী
  • উঁচু স্থান থেকে পড়ে মৃত প্রাণী
  • সংঘর্ষে মৃত প্রাণী
  • যে প্রাণী হিংস্র জন্তু খেয়েছে (তবে যদি জীবিত থাকা অবস্থায় জবাই করা হয়, তাহলে খাওয়া যাবে)
  • মূর্তিপূজার বেদির ওপর বলি দেওয়া প্রাণী
  • জুয়ার তির দিয়ে ভাগ্য নির্ণয় করে নির্ধারিত খাদ্য

এগুলো ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ (হারাম) করা হয়েছে এবং এগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাবিল-কাবিলের কাহিনি

হজরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর দুই পুত্র ছিলেন— কাবিল ও হাবিল

🔹 কাবিল ছিলেন বড় ছেলে, আর হাবিল ছিলেন ছোট।
🔹 তাঁদের আকলিমা নামের এক বোন ছিলেন।
🔹 নিয়ম অনুযায়ী হাবিলের সঙ্গে আকলিমার বিয়ের কথা ছিল, কিন্তু কাবিল তা মেনে নিতে পারেনি

এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তারা উভয়ে উৎসর্গ নিবেদন করল

হাবিল ছিলেন আল্লাহভীরু, তাই তাঁর কোরবানি কবুল হলো।
কাবিল ছিলেন অহংকারী, তাই তাঁর কোরবানি গ্রহণ করা হলো না

এরপর কাবিল রাগে উন্মত্ত হয়ে হাবিলকে হত্যা করল

🔹 সুরা মায়িদার ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে উম্মতদের এই কাহিনি শোনানোর নির্দেশ দেন
🔹 এই ঘটনাটি মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড বলে উল্লেখ করা হয়।

                                                                                                                   ভুল হলে ক্ষমা করবেন । 



কমেন্ট