স্বামীকে মৃত অবস্থায় বিছানায় পাওয়া যায়, আর স্ত্রীকে পাশের ঘরে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
ভিউ: ৮২
পোস্ট আপডেট ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩ মাস আগে
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ভাড়া বাসা থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাসার এক ঘরে পড়ে ছিল স্বামীর লাশ, আরেক ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় স্ত্রীর লাশ পাওয়া যায়। ঘর থেকে উদ্ধার করা একটি চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না...।’
আজ শুক্রবার সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামের একটি বাড়িতে লাশ দুটি পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ও স্বজনেরা ধারণা করছেন, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় স্বামী আবুল কালাম আজাদকে (৪৫) হত্যার পর ফাঁসিতে ঝুঁলে আত্মহত্যা করেছেন স্ত্রী নাজমিন নাহার (৩৫)।
আবুল কালামের জন্মস্থান সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কাশিয়াডাঙ্গা গ্রাম। তবে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন নাহারকে নিয়ে সদর উপজেলার ওয়ারিয়া গ্রামে মোহন পালের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি ঝাউডাঙ্গা বাজারের একজন কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী শারমিন খাতুন দুই সন্তানের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন।
আবুল কালামের ছোট ভাই এনামুল ইসলাম, যিনি ঝাউডাঙ্গা কলেজে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আবুল কালাম তার দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমিন নাহারকে যশোরের মনোহরপুর থেকে বিয়ে করেন। পরিবারের সদস্যরা এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেন। বৃহস্পতিবার রাতে, প্রতিদিনের মতো, আবুল কালাম দোকান বন্ধ করে রাত ১১টার দিকে বাড়ি ফিরেছিলেন। তবে শুক্রবার সকালে এনামুল ইসলামকে এক অজানা খবর আসে যে, তার ভাই আবুল কালামকে হত্যা করে তার ছোট ভাবি নাজমিন নাহার আত্মহত্যা করেছেন। এনামুল তার ভাইয়ের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখেন, এক ঘরে আবুল কালামের মরদেহ পড়ে রয়েছে, এবং অন্য ঘরে তার ছোট ভাবি নাজমিন নাহার আত্মহত্যা করেছেন। তিনি ঘরের ফ্যানের হুকের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছেন।
এনামুল ইসলাম জানান, আবুল কালামের পাশের দোকানদার, ঝাউডাঙ্গা বাজারের ওহিদুজ্জামান, সকালে দোকান না খোলায় তার গ্রাহকরা খোঁজ নিতে থাকেন। অনেকবার মুঠোফোনে কল করার পরও তার ফোন রিসিভ করা হয়নি। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের অনুরোধে সকাল ১০টার দিকে তিনি আবুল কালামের বাড়িতে গিয়ে দেখে, এক ঘরে আবুল কালামের মরদেহ পড়ে রয়েছে। আরেক ঘরে তার স্ত্রীর মরদেহ ঝুলছে। এই খবর বাড়ির মালিক মোহন পালকে জানানো হয়। মোহন পাল তারপর স্থানীয় ইউপি সদস্য, দফাদার ও চৌকিদারকে বিষয়টি জানান, এরপর তারা পুলিশকে খবর দেয়। দুপুরে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ এসে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, আবুল কালামের বুকে কালির কলম দিয়ে লেখা ছিল, ‘সরি জান, আই লাভ ইউ’। ধারণা করা হচ্ছে, এই লেখা হত্যার পর তার স্ত্রী নাজমিন নাহার লিখেছেন। চিরকুটে আরও লেখা ছিল, ‘আমি সব কিছু শেষ করে দিলাম। আমি ২টা ৩১ মিনিটে মারছি, এবার আমিও মরছি। আর কেউ বিরক্ত করবে না।’
সাতক্ষীরা সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার পর ময়নাতদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা হচ্ছে, নাজমিন নাহার তার স্বামীকে খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে কিছু খাইয়ে প্রথমে অচেতন করেছিলেন, এরপর তাকে মাথায় আঘাত করে এবং গলায় সরু রশি পেঁচিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় এখনও থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি।
Copyright © NRS IT 2025